গাড়িতে বমি না হওয়ার উপায়
গাড়িতে বমি না হওয়ার উপায় জেনে রাখলে তা ভ্রমণকালে আপনাকে অবশ্যই কাজে দেবে।
গাড়িতে চলাচলের সময় মোশন সিকনেসের কারণে অনেকেরই বমি বমি ভাব হতে দেখা যায়, তাই
গাড়িতে বমি না হওয়ার উপায় সম্পর্কে সবারই ধারণা রাখা দরকার। এই পোস্টে তাই
গাড়িতে বমি না হওয়ার উপায়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
যাত্রা পথে বমির সমস্যা থাকলে তা যেন গোটা যাত্রাপথের আনন্দটাই মাটি করে দেয়।
যাত্রা পথে আপনারা যেন বমির সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে পারেন সেজন্য এই পোস্টে
গাড়িতে বমি না হওয়ার উপায়, যাত্রাপথে বমি কেন হয়, বাসে বমি না হওয়ার ঔষধ,
মোশন সিকনেস দূর করার উপায় ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিস্তারিত তুলে
ধরব।
পোস্ট সূচিপত্র - গাড়িতে বমি না হওয়ার উপায় জেনে নিন
যাত্রা পথে বমি কেন হয়
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারে উঠলে মোশন সিকনেসের কারণে বমি
বমি ভাব দেখা দেয়। এ ধরনের সমস্যা হলে বেশিরভাগ মানুষই তা এড়িয়ে যান, ফলে এই
সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী রূপ লাভ করে। গতি এবং জড়তার ফলে মস্তিষ্কে সমন্বয়হীনতার
কারণে যানবাহনগুলোতে চড়লে বমির সমস্যা হতে পারে। আমাদের শরীরের গতি এবং জড়তার
ভারসাম্য অন্তঃকর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
আরও পড়ুন: আপন নামের অর্থ কি
যখন কেউ কোন গাড়ির উপর গতিশীল অবস্থায় থাকে তখন অন্তঃকর্ণ মস্তিষ্কে খবর
পাঠায়। তবে চোখ সেক্ষেত্রে ভিন্ন ভূমিকা পালন করে। সে আশেপাশের সিটে বসা
মানুষগুলোকে স্থির দেখতে পায়। আমাদের চোখ ও অন্তঃকর্ণের এই ভিন্নরূপী আচরণের
কারণে মোশন সিকনেস দেখা দেয়। এছাড়াও এসিডিটি, অসুস্থতা, গাড়ির উৎকট গন্ধ ও
ধোঁয়ার কারণে বমি বমি ভাব হতে দেখা যায়। তাই, এবার চলুন গাড়িতে বমি না হওয়ার
উপায় জেনে নেওয়া যাক।
গাড়িতে বমি না হওয়ার উপায় - বাসে বমি বন্ধ করার উপায়
গাড়িতে বমি কেন হয় সে সম্পর্কে আপনারা ধারণা পেয়েছেন। যেকোনো ব্যক্তিরই
গাড়িতে উঠলে বমি হতে পারে। বিশেষ করে বাসে বমি করার ঘটনা প্রত্যেকদিনই দেখা
যায়। এই সমস্যা থেকে মোটামুটি পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এখন আপনাদের সামনে গাড়িতে
বমি না হওয়ার উপায় শেয়ার করব।
আরও পড়ুন: লটকন ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- বমি প্রতিরোধে আদা বেশ উপকারী। আদা আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সহজতর করে। তাই যাত্রাপথে আদা কুচি কুচি করে চিবোতে পারেন। প্রয়োজন হলে আদা দিয়ে চা পান করে নিতে পারেন।
- দারুচিনিও বমি প্রতিরোধে বিশেষ কার্যকরী। যাত্রা পথে দারুচিনি খেলে তা আপনার বমি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
- টক জাতীয় ফল খেলে তা বমি দূর করে। যানবাহনে উঠলে তাই লেবুর পাতা, কমলার পাতা ইত্যাদি রাখতে পারেন। এসব পাতার গন্ধে বমি আসে না। উষ্ণ গরম পানিতে হালকা লেবুর রস মিশিয়ে সেই পানি খেয়ে নিতে পারেন। যা বমি প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যকর হবে।
- যাত্রা পথে চুইংগাম চিবাতে চিবাতে যেতে পারেন। কারণ এতে করে মুখও ব্যস্ত থাকবে এবং বমি বমি ভাবও আসবে না।
- চলন্ত গাড়িতে বই পড়া, মোবাইল দেখা ও অন্যান্য কাজ থেকে বিরত থাকুন কেননা তা ব্রেনের উপর চাপ সৃষ্টি করে মাথা ঘোরা ও বমির সমস্যার সৃষ্টি করে।
- অন্য যাত্রীর বমি করা দেখে যদি আপনার বমি আসে তবে সেদিকে দৃষ্টি দিবেন না।
- জিরা এমন একটি উপাদান যা আপনার বমি বমি ভাব নিমিষে দূর করে ফেলবে। তাই কিছু পরিমাণ জিরা গুঁড়ো করে তা খেয়ে ফেলুন দেখবেন বমি বমি ভাব চলে গেছে।
মোশন সিকনেস দূর করার উপায়
আপনারাই ইতোমধ্যে গাড়িতে বমি না হওয়ার উপায় সমূহ জেনে নিয়েছেন। যাত্রাপথে
যাদের মোশন সিকনেসের মতো সমস্যা দেখা দেয় তারা বেশ কিছু উপায় অবলম্বন করে এই
মোশন সিকনেস প্রতিরোধ করতে পারেন। তবে চলুন মোশন সিকনেস দূর করার কিছু উপায় জেনে
নিই।
- যাদের মোশন সিকনেস সমস্যা রয়েছে তারা কখনো গাড়ির উল্টো সিটে বসবেন না। উল্টো হয়ে বসলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। তাই সব সময় সোজা সিটে সামনের দিকে বসার চেষ্টা করবেন।
- কখনো গাড়ির পেছনে বসবেন না কেননা গাড়ির পেছনে বসলে গাড়িকে অতিরিক্ত গতিশীল মনে হয়। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন জানালার পাশে বসে জানালা খুলে বাইরের প্রকৃতি দেখার চেষ্টা করা। তাহলে খুব সহজে মোশন সিকনেস দূর হবে।
- কোথাও যাত্রাকালে তার পূর্বে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমিয়ে নিন। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে গাড়িতে অতিরিক্ত ঝাঁকুনির কারণে মাথাব্যথা ও বমির সমস্যা দেখা দেয়।
- যাত্রাকালে খাবারের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। বেশি কোনো খাবার খাবেন না আবার একদম খালি পেটেও থাকবেন না হালকা কিছু খেয়ে নিন, তারপর যাত্রা শুরু করুন। তবে যাত্রা পথে যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো।
- মেয়েদের বমি হয় কেন এটি অনেকেই জানতে চান। বিশেষ করে গর্ভবতী মেয়েদের ও বয়স্ক নারীদের যাত্রা পথে বমি হতে দেখা যায়। ঘনঘন যাত্রা না করে হঠাৎ যাত্রা করলে সাধারণত এই সমস্যা দেখা দেয়। তাই মেয়েদের ব্যাপারে বাড়তি যত্ন নিতে হবে।
বাসে বমি না হওয়ার ঔষধ
প্রিয় বন্ধুরা যাদের গাড়িতে উঠলে বমি সমস্যা হয় তারা কিছু ওষুধ সেবন করলে তা
থেকে দ্রুততর সময় মুক্তি পেতে পারেন। আপনারা ইতোমধ্যে গাড়িতে বমি না হওয়ার
উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। এবার চলুন বাসে বমি না হওয়ার কিছু ঔষধ
সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। আপনি বাসে ওঠার পূর্বে এক্লিজ প্লাস ট্যাব. অথবা
ম্যাক্স প্রো ট্যাব খেয়ে নিতে পারেন। যা বমি প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী। তবে বমি
প্রতিরোধে যেকোনো ওষুধই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।
যাত্রা পথে বমি প্রতিরোধে জয়ট্রিপ ওষুধটি বেশ ভালো কাজে দিয়ে থাকে। তবে এই
জয়ট্রিপ ছাড়াও এভোমিন, হায়োসিন, প্রোমিথাজিন, ওনডারটেসরন, মেকলোজিন ইত্যাদি
ট্যাবলেট গুলো বমি প্রতিরোধের অন্যতম জনপ্রিয় ওষুধগুলোর মধ্যে অন্যতম। বমিকে
দ্রুত হ্রাস করার জন্য অমিডন ১০ মিলি ট্যাবলেটটি বেশ উপকারী। তাই যাত্রা পথে কখনো
বমি হতে লাগলে এই ট্যাবলেটটি খেলে তা আপনার বমি দ্রুত হ্রাস করবে। সবগুলো ওষুধই
ডাক্তারের পরামর্শে সেবন করবেন।
শেষ কথা, গাড়িতে বমি না হওয়ার উপায়
প্রিয় পাঠক, আশা করি পুরো পোস্টটি পড়ার পরে আপনারা গাড়িতে বমি না হওয়ার উপায়
গুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। এছাড়াও গাড়িতে উঠলে বমি প্রতিরোধে কি
ধরনের ওষুধ খাবেন তাও জেনেছেন। বমি প্রতিরোধে উক্ত উপায়গুলো যথাযথ অনুসরণ করলে
যাত্রা পথে আপনি বমি থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন। পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে
ধন্যবাদ। পোস্টটি পড়ে উপকৃত হলে সকলের সাথে শেয়ার করে ফেলুন। @23891