রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। জীবনের পাপ থেকে মুক্তি লাভের জন্য পুরা সম্ভাবনা নিয়ে ফিরে আসে মাহে রমজান। তাকওয়ার উত্তাপ অনুভব করাতে যা কিছু অকল্যাণ অন্ধকারময় তা থেকে ব্যক্তির আন্তরিক ও বাহ্যিক জগতকে বিমুখ করে শুদ্ধ আলোকিত মানুষের উম্মেস ঘটাতে। তবে তার জন্য প্রয়োজন মাহে রমজানকে যথার্থভাবে যাপন সিয়াম পালনের নীতিবিধান বিষয়ে জ্ঞান অর্জন মাশায়েল বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা অর্জন।
সূচিপত্র
- রমজান মাসের সাথে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে
- রমজান হলো কুরআন নাযিলের মাস
- রমজান মাসের জান্নাতের দরজা গুলো খুলে দেওয়া হয় ও জাহান্নাম দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় শয়তান দেরকে
- রমজান মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর
- রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস
- রমজান পাপ থেকে রক্ষা লাভের মাস
- রমজান ধৈর্য ও সবরের মাস
- সিয়াম শুধু আল্লাহর জন্য
- আল কুরআন খতম ও তেলাওয়াত
- সদকা বা দান
- এতেকাফ
- রোজাদারদের ইফতার করানো
- তওবা করা
- ইসলামকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুসরণ করা
- সুন্নতে নববীর অনুসরণ
- সাদকাতুল ফিতরের বিধান
- সাদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব
- সাদকাতুল ফিতরের পরিমাণ
- কখন আদায় করবে সাদকাতুল ফিতর
- সাদকাতুল ফিতর কাকে দেবে
- শেষ কথা
রমজান মাসের সাথে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে
রমজান মাসে সাথে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন রয়েছে তা হলো সিয়াম পালন। হজ্ব যেমন জিলহজ্ব মাসের সাথে সম্পর্ক হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে তেমনি সিয়াম রমজান মাসে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা বেড়ে গেছে। আল্লাহু রাব্বুল আলামিন বলেন হে মুমিনগণ তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে যেমনই ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।
রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ইসলামের যে পাঁচটি বৃত্তির উপর প্রতিটি তো তার একটি হল সিয়াম পালন এ সিয়াম জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম যেমন হাদিসে এসেছে যে আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমান আনলো সালাত কায়েম করলো যাকাত আদায় করল সিয়াম পালন করলো রমজান মাসে আল্লাহতালার কর্তব্য হয়ে যায় তাকে জান্নাত প্রবেশ করানো।
রমজান হলো কুরআন নাযিলের মাস
রমজান মাস হল কুরআন নাযিলের মাস আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন রমজান মাস এতে নাযিল করা হয় আল কুরআন যা মানুষের দিশারী এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। রমজান মাসে সপ্তম আকাশে লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বাইতুল ইজ্জতের পবিত্র আল কুরান একেবারে নাজিল হয়েছে। সেখান থেকে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি নাযিল হতে শুরু করে। কুরআন নাযিলের দুটি পর্বই রমজান মাসকে ধন্য করেছে। শুধু আল-কুরআনি নয় হযরত ইব্রাহিম আঃ এর শহীফা তাওরাত যাবুর ইনজিল সহ সকল ওসি গ্রন্থ এই মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। বলে তবানি বর্ণিত একটি সহিহ হাদিসে উল্লেখ্য করা হয়েছে। এই মাসে মানুষের হেদায়েত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাযিল হয়েছে তেমনি আল্লাহ রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম।
রমজান মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজা গুলো খুলে দেওয়া হয়। আর জাহান্নামের দরজা গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে আবদ্ধ করা হয় অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায় শয়তানকে শিকল পরানো হয়। তাই শয়তান রমজানের পূর্বে যে সকল স্থানে অবাধে বিচরণ করতো রমজান মাস আসার পরে সেই স্থানে আর যেতে পারে না। শয়তানের তৎপরতা দুর্বল হয়ে যায় ফলে দেখা যায় ব্যাপকভাবে মানুষ তাওবা ও ধর্মপরায়ণ ও সৎকর্মের দিকে অগ্রসর হয় ও পাপাচার হতে দূরে থাকে। তারপরেও কিছু মানুষ অসৎ অন্যায় কাজ করে থাকে তারা শয়তানের অনেক বেশি প্রবাহিত হয়ে পড়েছে।
লাইলাতুল কদরের মাস
মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন লাইলাতুল কদর সমগ্র মাস অপেক্ষা উত্তম সে রাত্রে ফেরেশতাগণ ও রুহু অবতীর্ণিত হয় প্রত্যেক কাজে তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে শান্তি শান্তি সেই রজনী ঊষা আবির্ভাব পর্যন্ত। লাইলাতুল কদর হচ্ছে হাজার মাসের চাইতে উত্তম রাত। সে রাত্রে ইবাদত করলে হাজার মাসের চাইতে উত্তম বলে আখ্যায়িত করেছেন। 1000 মাসের যে আমল করলে যে নেকি উপার্জিত হয় লাইলাতুল কদরের এক রাত্রেই ইবাদত করলে সেই নেকি উপার্জিত হয়।
রমজান পাপ থেকে ক্ষমা লাভের মাস
যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপ সমূহ ক্ষমা করানো হচ্ছে বঞ্চিত হলো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাকে ধিক্কার দিয়েছেন তিনি বলেন ওই ব্যক্তি নাক ধুলায় দুসরিত হোক যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ কাব গুলি ক্ষমা করা হয়নি সত্যি সে প্রকৃতপক্ষে সফল কল্যাণ হতে বঞ্চিত এ মাসেও আল্লাহর রব্বুল আলামীন অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত রয়ে গেল।
রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন রমজান মাসে প্রত্যেক রজনী যখন আগমন ঘটে তখন শয়তান ও অসৎ জিনগুলোকে বন্দী করা হয়। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এ মাসে একটি দরজা খোলা হয় না জান্নাতের দরজা গুলো খুলে দেওয়া হয় এ মাসে তা বন্ধ করে দেওয়া হয় না প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী কে বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে সব কর্মের অনুসন্ধানকারী তুমি অগ্রসর হও হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী তুমি থেমে যাও এ মাসের প্রতি রাতে মুক্তি দিয়ে থাকেন।
রমজান ধৈর্য সবরের মাস
এ মাসে ঈমানদারগণ খাওয়া-দাওয়া বিবাহ সাদি ও অন্যান্য সকল ভাষায় আচরণের ধৈর্য শবরের এত অধিক অনুশীলন করেন তা অন্য কোন মাসে বা অন্য কোন পর্বে করেন না। এমনই ভাবে সিয়াম পালন করে যে ধৈর্যের প্রমাণ দেওয়া হয় তা অন্য কোন এবাদতে পাওয়া যায় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন ,ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেওয়া হবে।
সিয়াম শুধু আল্লাহর জন্য
আল্লাহু রব্বুল আলামিন নিজের সাথে সিয়ামের সম্পর্ক ঘোষণা করেছেন। এমনিভাবে তিনি সকল ইবাদত বন্দেগী থেকে সিয়ামকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন। যেমনঃ তিনি এক হাদিসে কুদসিতে বলেন মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য কিন্তু সিয়াম তার ব্যতিক্রম তা শুধু আমার জন্য আমি তার প্রতিদান দেব। আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত হে রাসুল আমাকে অতি উত্তম এক নেক আমলের কথা নির্দেশ দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তুমি সিয়াম পালন করো কারণ এর সমমর্যাদা আর কোন আমল নেই। সিয়ামে এত মজাদার কারণ কি তা আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। তবে আমরা যা দেখি তা হলো সিয়াম এমন একটি আমল যাতে লোক দেখানো ভাব থাকে না। বান্দা ও আল্লাহ তাআলার মধ্যকার একটি অতি গোপন বিষয়। সালাত হট যাকাত সহ অন্যান্য ইবাদত বন্দেগিতে করলে তা দেখা যায় পরিত্যাগ করলে বুঝা যায়। কিন্তু সিয়াম পালন করা লোক দেখানো বা প্রনো ভাবনা থাকে না এর মাঝে এক ক্লাস আন্তরিকতা বা আল্লাহর প্রতি এত নিষ্ঠতা নির্ভেজাল ও বেশি থাকে আমার জন্যে পানাহার ও যৌনতা পরিহার করে তাই সিয়াম পালনকারী আল্লাহর সন্তুষ্টির ব্যতীত অন্য কিছু আশা করে না।
আল কুরআন খতম ও তিলাওয়াত
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন সিয়াম ও কোরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে। হাদিসে এসেছে রমজানে জিব্রাইল আলাই সাল্লাম রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআন পাঠ করে শুনাতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে জিব্রাইলের কাছে তুলে ধরতেন। আল কুরআন তেলাওয়াত হলো সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। সিয়াম পালনকারী জিকির থেকে বঞ্চিত থাকতে পারেন না। আল কুরআন তেলাওয়াতের একটি সঠিক দিকনির্দেশনা মূলক প্রবন্ধ এ বইয়ের শেষের দিকে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। পাঠক এ থেকে উপকৃত হতে পারবেন। যদি কেউ কোরআন তেলাওয়াত করতে অপারগণ তাহলে বিভিন্ন তাসবিহ তাহলিল তাহমিদ আদায়ের মাধ্যমে মুখে আল্লাহর জিকিরে অব্যাহত রাখবেন।
সাদকা বা দান
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজান মাসে দানের পরিমাণ আরো বেড়ে যেত। ইমাম শাফি রহমাতুল্লাহি ও বর্ণিত রাসূলউল্লাহ আলাইহি সাল্লাম তার উম্মতের জন্য উত্তম কাজ করা হলো রমজান মাসে তারা বেশি বেশি দান সদকা করবে এই কারণে এ মাসে মানুষের বেশি প্রয়োজন থাকে অপরদিকে রমজান হল জিহাদের মার প্রত্যেকের উচিত অর্থ সম্পদ দান করার মাধ্যমে জিহাদের অংশ নেওয়া। পবিত্র রমজান মাসে যারা এক টাকা দান করবে মহান আল্লাহ তাআলা তাদেরকে 70 গুণ সওয়াব বাড়িয়ে দেয়।
এতেকাফ
ইবনে ওমর রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন। আশ্চর্যজনক হল মুসলমানরা ইতেকাফ পরিত্যাগ করে অথচ রাসুলুল্লাহ সঃ মদিনা আসার পর থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত কখনো এতেকাফ পরিত্যাগ করেন ।
রোজাদারকে ইফতার করানো
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি কোন সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করাবে সে সিয়াম পালনকারী অনুরূপ সব লাভ করবে তবে সিয়াম পালনকারী সব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। রমজান মাসে একজন রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করালে যে ইফতার করাবে তার আমলনামায় এক রোজার যে সওয়াব মহান আল্লাহ তায়ালা দিবেন ঠিক ততটুকু পরিমাণ সওয়াব যে ইফতার করাবে তার আমলনামায় দিবেন।
তওবা করা
তওবা করা ওয়াজিব। আমাদের সব সময় তওবা করা দরকার। তবে বিশেষ করে রমজান মাসে আরো বেশি বেশি তওবা করা উত্তম। এই মাসে তওবার অনুকূলে অবস্থা বিরাজ করে। শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয় জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া হয়। এছাড়া রমজান মাসে সকল ইবাদত বন্দেগী তওবার অনুকূলে পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করতে পারেনি তার মত হতভাগা আর পৃথিবীতে একটাও কেউ নেই।
ইসলামকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুসরণ করা
সিয়াম পালন করি তো বটে প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হলো আল্লাহ যা কিছু আদেশ করেছেন তা পালন করা। আর যা কিছু নিষেধ করেছেন তার প্রত্যেকটি বর্জন করা। এর নাম হল ইসলাম বাস টার কাছে মানুষের পূর্ণ আত্ম সমর্পণ। একজন মুসলিম যেমন কখনো নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে পারে না তেমনি অন্য মানুষের খেয়াল খুশি বা তাদের রচিত বিধানের অনুগত হতে পারে না। যদি হয় তবে তা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা হলো না। যদি এভাবে আল্লাহর বিধান অনুসারে জীবনকে পরিচালিত করা হয় তাকেই বলা হয় কোন পরিপূর্ণ ইসলাম আর পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আদেশ করেছন। ''মানুষকে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিন গন তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।''
সুন্নতে নববীর অনুসরণ
কোন আমলটা যতই এই ক্লাসের সাথে সম্পাদন করা হোক না কেন যদি আল্লাহর রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা না হয় তবে তা কবুল করা হবে না। বরং তা আল্লাহর দরবার থেকে প্রত্যাখ্যাত হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,'' যে এমন আমল করবে তার প্রতি আমাদের দিনের নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যান''। আমাদের দিনের নির্দেশ নেই কথাটির অর্থ হলো যা আমাদের সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত নয়। অতএব এমন ধরনের আমল যতই আল্লাহ সন্তুষ্ট অর্জনের নিয়ত করা হোক তার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর পক্ষ থেকে অনুমোদিত না হওয়ার কারণে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় । কোন ধর্মীয় আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য দুটো শর্ত তা হল এক কাজটি আলো সন্তুষ্টি করতে হবে। আল্লাহর রাসূলের নির্দেশিত পথ সম্পাদন করতে হবে। তাহলে কাজটি করে কোন সোয়া বর্জিত হবে না বরং গুনাহ হবে।
সাদাকাতুল ফিতরের বিধান
ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহু আল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম পালন করার জন্য সাদকাতুল ফিতর আদায় অপরেহার যোগ করে দিয়েছেন। অনর্থক অশ্লীল কথা ও কাজ পরিশুদ্ধ কারী ও অভাবে মানুষের জন্য অনাহারের ব্যবস্থা হিসেবে প্রচলিত। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পূর্বে এটা আদায় করবে তা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। আর যে ঈদের সালাতের পর আদায় করবেন তা অপরাধ নফল হিসেবে গৃহীত। অতএব সাদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু ওয়াজিব করেছেন তা পালন করা উম্মতের জন্য অপরিহার্য। রাসূল রাব্বুল আলামিন বলেন," হে রাসূলের আনুগত্য সেতু আল্লাহর ইবাদত আনুগত্য করল। এবং যে মুখ ফিরিয়ে নিলো আমি তোমাকে তাদের ওপর তত্ত্বাবধান করে পাঠায়নি।"
সাদাকাতুল ফিতর কার ওপর ওয়াজিব
প্রত্যেক এমন মুসলমান ব্যক্তির এর উপর ওয়াজিব যারা ঈদের দিনে তার পরিবারের একদিন এক রাতের খাবারের অতিরিক্ত যদি এক ছা পরিমাণ সাত থাকে তবে তার ওপর ওয়াজিব।তবে ইমাম আবু হানিফার উপর ঈদের দিনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ হিসেবে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলার রুপো বা সমপরিমাণের সম্পদের মালিক। যার ওপর সাদকাতুল ফিতর ওয়াজিব তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন তেমনি নিজের পরশুদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন।
সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ
প্রধান খাদ্য হিসেবে যে সকল বস্তু স্বীকৃত যেমন গম জব ভুট্টা চাউল খেজুর ইত্যাদি থেকে সপরিমাণ দান করতে হবে যেমন হাদিস এসেছে ইবনে ওমরের মতন থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের যাকাতুল ফিতর হিসেবে এক সা খেজুর অথবা এক সা গম আদায় অপরিহার্য করে দিয়েছেন। নবী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমলের সার হিসেবে একসা তে ২ কেজি ৪0 গ্রাম হয়ে থাকে। এটা অধিকাংশ ইমামের মত। আর ইমাম আবু হানিফার মতে অর্ধ সা পরিমাণ আদা দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা জায়েজ। তবে একসা পরিমাণ আদায় করলে আদায় হবে না অর্ধসা দিতে হবে এমন কথা কখনো কোন হাদিসে হানিফা ইমাম বলেননি বরং যুক্তি দিক দিয়ে এটা উত্তম যাতে মানুষের বিশেষ করে দরিদ্র অসহায়দের উপকার বেশি হয়। তাই একশ পরিমাণ খাদ্য সাদকাতুল ফিতর হিসেবে দান করা হানাফি মাযহাবের বিরোধী নয় বরং উত্তম কেননা অধিকাংশ সহীহ হাদিসে একসা পরিমাণ আদায় করতে বলা হয়েছে তাছাড়া হানিফার কথা বলা হয়েছে সেটি এরা কি চায় এর হিসেবে আর ইরাকি সাহেব হিসেবে অর্ধ সাথে এক কেজি সাত শত পঞ্চাশ গ্রাম হয়ে থাকে।
কখন আদায় করবে সাদকাতুল ফিতর
সাদা কাতল আদায় করা দুটো সময় আছে। এটি হলো উত্তম সময় অপরটি ধৈর্য সময়। আদায় করা উত্তম সময় হলো ঈদের দিন ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করা । হাদিসে এসেছে ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত যে," রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগায়ে যাওয়ার পূর্বে সাক্ষাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।" সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার সুযোগ দেওয়ার জন্যই ঈদুল ফিতরের সালাত একটু লম্বায় আদায় করা মুস্তাহাব আদায় করার ধৈর্য হলো ধৈর্য সময় হলো যদি কেউ ঈদের পূর্বে তোর আদায় করে তবে আদায় হয়ে যাবে সহি বুখারীতে আছে আব্দুল্লাহ এভাবে আদায় করতেন। তবে কোন সঙ্গত ঈদের সালাতের পড়ে হবে না বরং একটি নফল হিসেবে আদায় হবে। ওযুর বা বিশেষ অসুবিধায় কেউ যদি ঈদের সালাতে পূর্বে আদায় করতে না পারে তবে সে ঈদের সালাতের পর আদায় করবে।
সাদাকাতুল ফিতর কাকে দিবে
নিজ শহরে অভাবী ও দরিদ্র মানুষদের সাদা কাতার ফিতর দান করবেন। যারা যাকাত গ্রহণের আধিকারী রাখে এমন অভাবে লোকেদের কে সর্বপ্রথম ফিতর প্রদান করা হবে। এজন্য দরিদ্র মানুষকে একাধিক ফিতরা দেওয়া যেমন জায়েজ আছে ,তেমনি একটি ফিতর বন্টন করে একাধিক মানুষকেও দেওয়াও জায়েজ।
শেষ কথা:
পবিত্র রমজান মাস মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে। যারা ইহকালে সিয়াম পালন করবে সঠিকভাবে পরকালে সিয়াম তাদের জন্য সুপারিশ করবে। মহান আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে জান্নাতে দিবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন যারা রমজান মাস পেল কিন্তু তাদের জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে নিতে পারল না তাদের মধ্যেও হতভাগা আর পৃথিবীতে কেউ নেই। তাই আমাদের সবার উচিত রমজানের রোজা সঠিকভাবে পালন করা ও সাদাকাতুল ফিতির আদায় করা এবং যাকাত প্রদান করা।