রোজার গুরুত্ব ওফজিলত জানুন

শাওম আরবি শব্দ এর অর্থ বিরত থাকা। ফারসি ভাষায় রোজা বলা হয।এর অর্থ উপবাস থাকা। আল্লাহর সন্তুষ্ট উদ্দেশে নিয়ত সহকারে সুবে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্বপ্রকার পানাহার ও পাপাচার থেকে বিরত থাকাকে শরীয়তের ভাষায় শাওম বা রোজা বলে। সাওমে শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা পাই ক্ষুধার্ত অনাহারি মানুষকে কষ্ট দুঃখ কষ্ট উপলব্ধি করা যায়। মিথ্যা অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা হয়। রোজা এমন একটি ইবাদত যার অভ্যন্তরীণ বিষয় আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তাই এ বিশেষ ইবাদতের সওয়াব ও নির্ধারিত আল্লাহর জন্য তিনি নিজেই এর প্রতিদান দেবেন।

ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। যথাঃ কালেমা, নামাজ্‌ রোজা,হজ ও যাকাত। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি স্তম্ভ হল রোজা। আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জনের জন্য রোজা রাখা হয়। ইবাদত বন্দেগী থেকে রোজাকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন। যেমনঃ তিনি এক হাদীসে খুশিতে বলেন, " মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম, তা শুধু আমার জন্য আমি তার প্রতিদান দেব।" (মুসলিম ২৭৬০) এ হাদিস থেকে অনুধাবন করতে পারি নেক আমলের মাঝে রোজা রাখা গুরুত্ব আল্লাহর কাছে কত বেশি।





সাহাবী আবু হুরাইয়া (রাঃ) যখন বলেছিলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ আমাকে অতি উত্তম কোন নেক আমলের নির্দেশ দিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন," তুমি রোজা রাখো। " কারণ এর সমমর্যাদা আর কোন আমল নেই। (নাসায়ি ২৫৩৪) রোজা এর মর্যাদার কারণ কি তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভালো জানেন। তবে আমরা যা দেখি তা হল, রোজা এমন একটা আমল যাতে লোক দেখানো ভাব থাকে না। এটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার একটি অতি গোপন বিষয়। নামাজ হওয়ার যাকাত সহ অন্যান্য এবাদত বন্দেগীকে সম্পাদন করলো তা দেখা যাই। পরিত্যাগ করলেও বোঝা যায় কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে লোক দেখানো বা সামান্য সুযোগ থাকে না। বলে রোজার মধ্যে ১ লাখ, আন্তরিকতা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠা নির্ভেজাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আল্লাহ বলেন," রোজাদার আমার জন্য পানাহার ও সহবাস পরিত্যাগ করে।" (মুসলিম ২৭৬০)

সূচিপত্রঃ

  •  রোজা হল জান্নাত লাভের পথ
  • রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল
  • রোজাদারের মুখের গন্ধ  আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়ে উত্তম
  • রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ
  • ইহকাল ও পরকালের সাফল্যের মাধ্যম
  • রোজা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে
  •  রোজা  গুনাহ  মাপের কারণ
  • সকল প্রকার অন্যায় হতে বিরত থাকা
  • সেহরি খাওয়া
  •  ইফতার বিলম্ব না করা
  • শেষ কথা

রোজা হল জান্নাত লাভের পথ

হাদিস এসেছে , আবু হুরাইয়া (রাঃ) বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ(সাঃ )বললাম ,যে আল্লাহর রাসূ্‌ল, আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দেন, যা দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি। তিনি বললেন, তুমি রোজা রাখো। কেননা এ সমকক্ষ আর কোন ইবাদত নেই। (নাসায়ি২২২০)

রাসূলুল্লাহু সাঃ আরো বলেছেন, জান্নাতের একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন রোজাদার গন শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজাদার গন কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। যখন তাদের প্রবেশ শেষ হবে, তখন দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী ১৭৯৭)

রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল

হাদিসে এসেছে, রোজা হল ঢাল ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার মজবুত দুর্গ। বুখারী মুসলিমদের হাদিস এসেছে, যে ব্যাক্তি আল্লাহর জন্য একদিন রোজা রাখবে আল্লাহ তার থেকে জাহান্নামকে এক খরিফ 70 বছর সরিয়ে দেবেন। (মুসলিম ২৭৬৯) রোজাদার বিনা হিসেবে প্রতিদান লাভ করে থাকেন কিন্তু অন্যান্য ইবাদত বন্দেগীয় সৎকর্মের প্রতিদান হিসেবে বিনা হিসেবে দেওয়া যায় না। বরং প্রতিটি নেক আমলের পরিবর্তে আমলকারীকে ১০ গুন থেকে ৭০০ গুন পর্যন্ত প্রতিদান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ বলেছেন মানব সন্তানের প্রতি যে নেক আমলের প্রতিদান পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা," রোজা শুধু আমার জন্য আমি তার প্রতিদান দেব।" (মুসলিম ১৫৫১)

রোজাদারের মুখের গন্ধ  আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়ে উত্তম

মহান আল্লাহ তাআলার কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ মেশকে আম্বার এর চেয়ে উত্তম বলে অভিহিত করেছেন। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ অধিক পছন্দনীয়। একদল আলেমের মতে, মুখের দুর্গন্ধ যাদের দূর না হয় ,তারই মিসওয়াক করা মাকরূহ। দীর্ঘক্ষন থাকার ফলে দিবসের   শেষাংশে রোজারের মুখে দুর্গন্ধ ভরে যায়। রোজাদার এক্ষেত্রে মেসওয়াকের মাসলা উলামায়ে কেরাম গণ বিভক্ত করে ছেন কেউ কেউ মনে করেন শর্ত হীন ভাবেই তার ব্যক্তি মেসওয়াক করতে পারে। পূর্বে মুস্তাহাব কেউ বলেন কেবল আসরের পরে মেসওয়াক করা মাকরুহ হবে কোন সময় নয়। মহানবী (সাঃ) বলেছেন," যার হাতে মোহাম্মদ এর সালাম এর জীবন সে সত্তাই শপথ সিয়াম পালনকালীন মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মেশকের ঘ্রাণ হতেও প্রিয়।"

রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ

  1. মুসলমান হওয়া।
  2. আক্কেল হওয়া অর্থাৎ সজ্ঞানে থাকা ,পাগল না হওয়া।
  3. বালিগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
  4. অসুস্থ না হওয়া।

ইহকাল ও পরকালের সাফল্যের মাধ্যমে

রোজা এমন একটি ইবাদত। যা মানুষকে ইহকালে সাফল্য ও পরকালে মুক্তি দেই জাহান্নাম থেকে। রোজা এমন একটি শারীরিক ইবাদত যা শরীর ও মনকে ভালো রাখে। রোজা রাখলে ইহকালে সকল সংসারের দুঃখ কষ্ট থেকে বেঁচে থাকা যায়। ও পরকালে আল্লাহ তার নিজ হাত দিয়ে রোজার প্রতিদান দিবেন। রোজা হল ইহকালে কল্যাণ ও পরকালের মুক্তির মাধ্যম। সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ একটি হলো ইফতারের সময় খাবার অনুমতি অপরটি হল আল্লাহর  সাথে সাক্ষাতের সময়। এটি হাদিসে এসেছে ইফতারের সময় আনন্দ হল এর কারণ যে সিয়াম পূর্ণ করতে পারলেও খাবারদাবাদের অনুমতি পাওয়া গেল। এটা বাস্তব সম্মান আনন্দের বিষয় যা আমাদের সকলের বুঝে আসে ও অনুভব করি। অপরদিকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের যে আনন্দ তা অনুভব করতে আমরা এখন না পারলেও কিয়ামতের দিন পারা যাবে ।যখন সকল মানুষ কর্তৃপক্ষে আল্লাহ মুখী থাকবে।

রোজা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে

রোজা এমন একটা ইবাদত যা কিয়ামতের দিন রোজা সুপারিশ করবে। যে ব্যক্তির রোজা রাখবে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবে। কিয়ামতের দিন যখন মানুষের কাছে হিসাব চাওয়া হবে। ঠিক সে সময় যে ব্যক্তি সাওম পালন করবে সেই শাওম সে ব্যক্তির জন্য সুপারিশ কর। যে  সুষ্ঠভাবে পালন করেছে তাকে যেন জাহান্নামে দেওয়া না হয় ।তাকে যেন জান্নাতে দেওয়া হয়।
আব্দুল্লাহ বিন ওমর থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে প্রতিপালক আমি দিনের বেলা তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। কোরআন বলেছে, হে প্রতিপালক আমি তাকে রাতে  নিদ্রা হতে বিরক্ত রেখেছি ,তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশ  কবুল করা হবে। 

রোজা গুনাহ মাফের কারণ

রোজা হলো অনেকগুলো নেক আমলের সমষ্টি।  আল্লাহ তা'আলা বলেন, সৎ কর্ম অবশ্যই পাপসমূহ মিটিয়ে দেয়। ( সূরা হুদ ১১৪ ) মহাদেশে রয়েছে  যা প্রমাণ করে যে নেক আমলকে বিভিন্ন ছোটখাট বাপের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। অর্থাৎ নেক আমলের কারণে গুনাহগুলো আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। মানুষ যখন পরিবার-পরিজন প্রতিবেশী ও ধন সম্পদের কারণে গুনাহ করে ফেলে। তখন  সিয়াম ফটকা সে গুনাহকে মিটিয়ে দেয়, আর রমজান তো গ্রহণের মাপিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে আরো বেশি সুযোগ দিয়েছে।" যে রমজান মাসে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।"

সকল প্রকার অন্যায় হতে বিরত থাকা

রমজানের সকল প্রকার অন্যায় হতে বিরত না থাকলে, সিয়াম কবুলের বিষয়টা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। অনেকেই দেখা যায় সিয়াম পালন করে, অযথা কথাবার্তা ঝগড়া-বিবাদী লিপ্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু, সে খবর রাখে না যে, সকল অন্যায় কাজকর্মশানের প্রতিদান লাভে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাদের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন, "অনেক সিয়াম পালনকারী আছে তারা রাত্রি জাগরণ ব্যতীত আর কিছুই লাভ করেনা। অতএব যারা  সিয়াম পালন করেছে তার উচিত তার মুখ কর্ণ যোগ্য হাত ও পা সবকিছু সিয়াম পালন করবে। সকল অন্যায় অবৈধ কাজ হতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পবিত্র রাখবে।"

সেহেরী খাওয়া


সেহরি খাওয়া হলো সুন্নাত। রাসুল সাঃ বলেছেন , তোমরা সেহেরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে। সেহরি খাওয়ার সময় ছাড়লাম সেহরি খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছে। মোকাবেলা করার জন্য সেহরি খাওয়া উত্তম। সেহেরি খেলে সিয়াম পালনের কষ্ট কম হয়। ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সেহেরী না খেয়ে রোজা পালন করতো। তাই আমাদের ও ইহুদি খ্রিস্টানদের মধ্যে পার্থক্য হলো সেহেরি খাওয়া। শাহরির অর্থ হলো যাক কিছু রাতের শেষ ভাগে খাওয়া হয় সুন্নত হলো দেরি করে খাওয়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম সব সময় সেহরি রাতের শেষ ভাগে খেতেন। ফজরের ওয়াক্ত আসার পূর্বক্ষণে সেহরি খেলে, সিয়াম পালনে অধিকত সহজ হয়। ফজরের সালাত আদায় করার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কষ্ট করতে হয় না। আগে আগে শেষ করা সুন্নাত নয়। এর সময় শেষ হলো কিনা তা জানবেন নিজের চোখের পূর্ব আকাশের শুভ্রতা দেখে অথবা ক্যালেন্দার ও ঘড়ির মাধ্যমে সূক্ষ্ম হিসাব করে কিংবা নির্ভরযোগ্য মুয়াজ্জিনের আজান শুনে।

ইফতার বিলম্ব না করা

সূর্য অস্তের সঙ্গে সঙ্গে রাতের আগমন ঘটে ও ইফতারি করার সময় হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, রাত পর্যন্ত সিয়াম পালন করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন, যখন এখান থেকে রাত্রির আগমন ঘটে ওইখানে দিন চলে যায় এবং সূর্য অস্ত্র হয় সিয়াম। পালনকারী ইফতার করবে ঠিক তখন। তাই ইফতারের আদব হলো সূর্যাস্ত মাত্রই দেরি না করে ইফতার করা। সময়ে হওয়া মাত্রই ইফতার করার ব্যাপারটা অনেক হাদিসে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। যেমন রাসুল সাঃ বলেছেন, যে মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত সময় মাত্র ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের পথে থাকবে। রাসুল সালাম আরো বলেছেন, হে সাহাবীরা সকলের চেয়ে তাড়াতাড়ি উদ্ধার করতেন ও সকলের চেয়ে দেরিতে সেহেরী খেতেন।  আল্লাহ বলেন," যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো তাহলে আমার অনুসরণ কর তাহলে ও তোমাদের ভালবাসবেন।"

শেষ কথা

একটু চিন্তা করে দেখুন যে, আল্লাহু রাব্বুল আলামিন আমাদের নিজ অনুগ্রহে হাজারো নিয়ামতে ডুবিয়ে রেখেছেন। নিজ মেহেরবানীতে আমাদের ইসলামের মত মহান নেয়ামত দান করেছেন ।তিনি আমাদের জন্য রোজাকে ফরজ করেছেন। এ রোজার প্রতিদান তিনি নিজের হাতে দিবেন বলে ঘোষণা করেছেন। তাই আমাদের উচিত সকলের রোজা পালন করা। রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক। রোজার মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। আমরা সবাই বেশি বেশি রোজার মাসে পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করব ও যথাসাধ্য একবার হলেও পবিত্র কুরআন পড়ে শেষ করব। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রমজান মাসের ৩০ টি রোজা পালন করার তৌফিক দান করুক আমিন।



 




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url